রিকশাওয়ালার রাত
শহরের আলো নিভে গেছে অনেক আগেই। রাত তখন প্রায় আড়াইটা। ফাঁকা রাস্তা, চারদিকে শুধু কুকুরের হুক্কাহুয়া আর বাতাসের হাহাকার। মফস্বলের সেই রিকশাওয়ালা রহিম এখনও গাড়ি চালাচ্ছে। সারাদিনের ভাড়া কম হয়েছে, তাই একটু দেরি করেই বাড়ি ফিরছে।
হঠাৎ রাস্তার মোড়ে এক সাদা শাড়ি পরা মহিলা হাত তুলল। রহিম থামল। মহিলার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না, চুল মুখ ঢেকে রেখেছে। কণ্ঠে অদ্ভুত কর্কশতা— “চাচা, কবরস্থানের পাশ দিয়ে একটু নিয়ে যাবেন?”
রহিমের বুকের ভেতরটা কেমন জানি কেঁপে উঠল। কবরস্থানের রাস্তাটা সবাই এড়িয়ে চলে। কিন্তু ভাড়া দ্বিগুণ পাবে ভেবে সে রাজি হলো।
রিকশা ধীরে ধীরে চলতে লাগল। চারদিকে নিস্তব্ধতা, শুধু চাকায় ঝিঁঝিঁ আওয়াজ। কবরস্থানের কাছে আসতেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করল। রহিম ঘাড় ঘুরিয়ে যাত্রীকে দেখল—কিন্তু কেউ নেই!
রিকশার সিট খালি!
হঠাৎ পিছন থেকে ভেসে এল কর্কশ হাসি। রহিমের কানে ফিসফিস করে কেউ বলল— “তুমি কি ভাবছো আমি নেমে গেছি?”
রহিম ঘেমে একেবারে ভিজে গেল। হঠাৎ করে রিকশার চাকাগুলো থেমে গেল, যেন কেউ শক্ত করে ধরে রেখেছে। পিছনে তাকাতেই সে দেখল, সাদা শাড়ি পরা মহিলাটি এখন রিকশার উপরে বসে নেই—সে দাঁড়িয়ে আছে রিকশার সামনে! তার চোখ দুটো জ্বলছে লাল আগুনের মতো।
“এখন থেকে তুমিই আমাকে চালাবে... চিরকাল।”
রহিমের গলা দিয়ে শব্দ বেরোল না। পরদিন সকালে গ্রামের লোকেরা কবরস্থানের পাশের রাস্তায় তার রিকশা পেল—রিকশার হ্যান্ডেলে রহিমের নিথর দেহ ঝুলছিল। আর রিকশার পিছনের সিটে কারও চুল ছড়িয়ে ছিল, যেন কেউ সেখানেই বসেছিল রাতে।


0 মন্তব্যসমূহ