💀 লণ্ঠনের ছায়া 💀
রাত তখন প্রায় সাড়ে বারোটা। গ্রামের শেষ প্রান্তে দীর্ঘ একটা কাঁচা রাস্তা—দু’পাশে বিশাল বটগাছ আর মাঝেমাঝে শুকনো পাতার খসখস শব্দ। চাঁদের আলো মেঘে ঢাকা, মাঝে মাঝে ঝিলিক মারে, আবার মিলিয়ে যায়।
রিজওয়ান শহর থেকে ফিরছে মোটরসাইকেল নিয়ে। সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত চোখে হাই তুলছে সে। পথে একটাও মানুষ নেই—শুধু কুকুরের ডাক আর বাতাসে পাতার ঘর্ষণ।
হঠাৎ! রাস্তার এক কোণে একটা বৃদ্ধা মহিলা দাঁড়িয়ে। শাড়িটা পুরনো, সাদা, ধুলায় মাখা; কাঁধে টানা শাল, আর হাতে একটা লণ্ঠন—ম্লান আলো জ্বলছে তাতে।
রিজওয়ান থামল। “মা, এই রাতে একা একা? কোথায় যাবেন?” বৃদ্ধা ধীরে মুখ তুলল—চোখে একরকম নিস্তেজ দৃষ্টি, ঠোঁটে হালকা হাসি। “বাবা, পথের শেষ আলোয় নামিয়ে দিও…”
রিজওয়ান কিছু না ভেবেই বলে, “চলুন মা, উঠুন। রাত অনেক হয়েছে।” বৃদ্ধা চুপচাপ উঠে বসে পেছনে। রিজওয়ান মোটরসাইকেল চালাতে শুরু করে।
হাওয়া ঠান্ডা, কুয়াশা জমছে। কিছুক্ষণ পর সে মনে করল, পিছন থেকে কোনো আওয়াজ নেই। আয়নায় তাকিয়ে দেখে— কেউ নেই!
পেছনের সিট একদম ফাঁকা! হৃদপিণ্ডটা হঠাৎ ধকধক করে উঠল। সে দ্রুত ব্রেক কষে ঘুরে তাকায়। চারদিক ফাঁকা, বাতাসে অদ্ভুত ঠান্ডা ভাব। ঠিক তখনই, দূরে দেখা গেল একটা লণ্ঠনের আলো কাঁপছে…
রিজওয়ান চোখ কুঁচকে দেখে—ওই তো সেই বৃদ্ধা! সে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার মাঝখানে, কিন্তু এখন তার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চামড়া কুঁচকে গেছে, চোখ দুটো রক্তলাল, ঠোঁট ফেটে হেসে উঠছে… “আমি তো বলেছিলাম, পথের শেষ আলোয় নামিয়ে দিও…”
রিজওয়ান মোটরসাইকেল চালু করতে গেল, কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ! চাবি ঘুরছে না, হাত ঘেমে যাচ্ছে। বৃদ্ধা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে, তার পায়ের শব্দ—টুপ... টুপ... টুপ...
বাতাস হিম হয়ে গেল, আশেপাশে কুয়াশা ঘনিয়ে আসছে। রিজওয়ান আতঙ্কে পিছিয়ে যায়, গাছের গুঁড়ির আড়ালে লুকাতে চায়। বৃদ্ধা তখন বলে, “যেখানে আলো নিভে যায়… সেখানেই আমি থাকি…”
এক মুহূর্তে লণ্ঠনের আলোটা নিভে গেল। চারদিক ঘোর অন্ধকার। রিজওয়ান চিৎকার করতে গিয়েও পারে না—গলা যেন জমে গেছে!
অন্ধকারে হঠাৎ ফিসফিসানি— “তুমি আলোকে ভয় পেও না… আলো তো শুধু ছায়া দেখায়…”
পরদিন সকালে গ্রামের লোকেরা রাস্তার ধারে দেখতে পায় রিজওয়ানের মোটরসাইকেলটা পড়ে আছে। ইঞ্জিন জ্বলে ছাই হয়ে গেছে, আর পাশে মাটিতে একটা পুরনো লণ্ঠন… যেটা আজও জ্বলছে, কিন্তু কেউ কাছে গেলেই আলো নিভে যায়, আর বাতাসে ভেসে আসে ফিসফিস আওয়াজ— “পথের শেষ আলোয় নামিয়ে দিও…”
👻 শেষ… নাকি এখনও বাকি? 👻

0 মন্তব্যসমূহ