কালো দরজা — পর্ব ৫ ও ৬
পোর্ব ৫: "অতৃপ্ত ছায়া" — এবং পর্ব ৬: "অন্তিম প্রত্যাবর্তন" — ওয়েবের জন্য সাজানো পাঠ্য ও রিল কভার প্রস্তুত।
এই দুই পর্বে গ্রামীণ পুরনো স্কুল, রহস্যজনক দাগ ও চোখ লাল ছায়া—শরিফের অভিজ্ঞতা ও তার পরবর্তী অদ্ভুত ঘটনার বর্ণনা আছে। নিচে পুরো পর্বগুলো ওয়েব-রিডেবল ফরম্যাটে দেওয়া হলো — কপি করে আপনার ওয়েবসাইটে সরাসরি বসিয়ে দিতে পারবেন।
পর্ব ৫ — অতৃপ্ত ছায়া
রাত তখন প্রায় আড়াইটা। গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে যে প্রাইমারি স্কুলটা কয়েক বছর ধরে বন্ধ অবস্থায়, মানুষ বলে—রাত হলে ভেতর থেকে অদ্ভুত আওয়াজ আসে। শরিফ সেই রাত্রিতে ঠিক করল, সে নিজেই দেখে নেবে।
টর্চ হাতে, কাঁধে লাল কাপড়, পা টিপে টিপে ডালপালা পার হয়ে সে স্কুলের কাঁটায় পৌঁছালো। গেটটা মরিচা ধরে। ঠেলে ঢুকতেই কিঞ্চিত চিৎকারের মতো শব্দ—"চি—ইইইই"।
ক্লাসরুমগুলো অন্ধকার; শুধু এক ঘর থেকে ক্ষীণ আলো দুলছে। দরজার উপরে চক দিয়ে লেখা—"যে ঢোকে, সে আর ফিরে যায় না"। দরজার নিচ দিয়ে লালচে তরল কণ্ঠে ফিসফিস করছে—রক্ত নাকি অন্য কিছু, তা বলা কঠিন।
শরিফ যখন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল, টেবিলের ওপর পড়ে ছিল একটা পুরনো খাতা। খাতার প্রতিটি পাতায় একই লাইন—"তুমি ফিরে এসেছ... এখন আমায় শেষ করো।"
হঠাৎ কাঁচ ভাঙার শব্দ। পিছন ফিরে দেখে একটি ছায়া; মুখ দেখা যাচ্ছিলো না, শুধু জ্বলন্ত লাল চোখ। ছায়াটি কাঁধে হাত রাখার মত ধীরে ধীরে কাছে এলো। তার শীতল নিশ্বাস শরিফের গলায় চেপে ধরা মত—ফিরে যাবার কোনো পথ নেই বলে জানালো।
টর্চটা একেই একে নিভে গেল; চারিদিকে অন্ধকার। কোনো সাড়া-শব্দ নেই, শুধু হালকা কণ্ঠে সেই ছায়ার বাণী—"তুমি যেদিন কালো দরজা খুলেছো, তখনই আমি মুক্ত হয়েছি... কিন্তু অসম্পূর্ণ থেকে গেছি। এখন তুমি শেষ করবে।"
সেই রাত থেকেই গ্রামের কিছুর বদলে যাওয়া শুরু হয়—শরিফ আর আগের মতো নেই; সে ভীষণ শান্ত, নিরুত্তাপ, চোখে যেন কোনো বর্ষার মতো লাল উজ্জ্বলতা জ্বলছে।
পর্ব ৬ — অন্তিম প্রত্যাবর্তন
ভোর ছয়টা। গ্রামবাসীরা পুরনো স্কুলের সামনায় জমে — সেখানে মিলেছে শরিফের টর্চ আর একটি পুরনো ডায়েরি। কিন্তু শরিফ কোথাও নেই। ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা—"আমি তার মুখ দেখেছি; এখন আমার চোখও লাল হয়ে গেছে।"
তিন দিন পর অবাক করে দিয়ে শরিফ বাড়ি ফিরে আসে; কথা নেই, চলাফেরা অচেনা। রাতের বেলা সে দেয়ালে লিখে রাখে—"দরজাটা আবার খুলতে হবে... নইলে ও ফিরে আসবে।"
একদিন তার মা দেখলেন, শরিফ মাঝরাতে আবার স্কুলের পথে হেঁটেচলছে, গলায় সেই লাল কাপড়। স্কুলের ভিতর থেকে এক দুর্গন্ধময় হাসি ভেসে এল; দরজার বন্ধ হওয়ার ঠাস শব্দ—আর তারপর নিস্তব্ধতা।
পরদিন সকালে স্কুলে ঢুকে দেয়ালে বড় করে লেখা ছিল—"দরজাটা খোলা রইল..." কিন্তু শরিফ নেই। গ্রামের বয়জররা বলল—যারা একবার কালো দরজা দেখেছে, তাদের মাঝে কেমন একটা শূন্যতা থাকে; দিনের আলোয়ও তারা অস্বাভাবিক শান্ত।
এই ঘটনার পর থেকে গ্রামে সন্ধ্যার পরে লোক কমে আসে; কেউ কেউ জানে না তারা কেন কাঁপছে, আবার কেউ বলছে—দরজার গল্পটা থামেনি, বরং আরো ছড়িয়ে পড়েছে।


0 মন্তব্যসমূহ