কুয়াশার ওপারে

🕯️ কুয়াশার ওপারে

রাত তখন প্রায় আড়াইটা। নদীর ওপর ঘন কুয়াশা নেমেছে, চোখের সামনে হাত রাখলেও দেখা যায় না। একটা ছোট কাঠের নৌকা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে নদীর মাঝপথে।

নৌকার মাঝি — রমিজ, গ্রামজুড়ে সাহসী মানুষ বলে পরিচিত। লোকজন বলে, “ওর নৌকা যেই উঠবে, ভয় পায় না কিছুতেই।” কিন্তু আজকের রাতটা যেন অন্যরকম।

রমিজের নৌকায় একজন মাত্র যাত্রী — এক বুড়ো লোক, মুখটা ঘোমটার নিচে ঢাকা। নৌকায় উঠেই সে নিচু গলায় বলেছিল, “চল, ওই পাড়ে নিয়ে যা… কিন্তু থামবি না, কেউ ডাকলে পিছনে তাকাবি না।”

রমিজ তখন হাসতে হাসতে বলেছিল, “এই নদীতে ভূত-টুত নাই দাদা, ভয় কিসের?”

বুড়ো কোনো উত্তর দেয়নি। শুধু নদীর ঢেউয়ের শব্দ, আর হালকা গুনগুন আওয়াজ — যেন কেউ নিচু স্বরে নাম জপছে।

এক সময় রমিজের মনে হলো — কেউ তার নামটা ডাকছে! “রমিজ… রমিজ… থামো…”

সে চমকে তাকাল — কিন্তু নদীর ওপরে কেউ নেই। বুড়ো তখন কাঁপা কণ্ঠে বলল, “আমি তোকে বলেছিলাম… পিছনে তাকাস না…”

নৌকার নিচে কিছু একটা ধাক্কা দিল। নদীর পানি লালচে হয়ে উঠল… রমিজ বুঝল না, মাছ নাকি… কিছু অন্য!

কিছুক্ষণ পর নৌকাটা থেমে গেল নিজে থেকেই। বুড়ো লোকটা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, বলল — “এই আমার ঘর পৌঁছেছি।”

রমিজ তাকিয়ে দেখে, নদীর ওপারে কিছুই নেই — শুধু কুয়াশার ভেতর এক সারি কবরের মতো ছায়া।

বুড়ো নেমে গেল পানির মধ্যে… পানি তার হাঁটু, বুক, তারপর গলা ছুঁয়ে গেল… কিন্তু সে তলিয়ে গেল না — বরং মিলিয়ে গেল কুয়াশার মধ্যে!

রমিজ ভয়ে চিৎকার করে দাঁড় টানতে লাগল। কিন্তু নৌকাটা আর ফিরল না। পরদিন সকালে লোকজন নদীতে একটা ভাসমান নৌকা পেল, আর মাঝখানে পড়ে ছিল একটা পুরনো ছেঁড়া ঘোমটা… যেটা আজও কেউ স্পর্শ করার সাহস পায়নি।

© ভয়ংকর গল্প: “কুয়াশার ওপারে”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ