চুলার আগুন

🕯️ চুলার আগুন

গ্রামের নাম—বিষণ্ণপুর। ছোট্ট একটা গ্রাম, নদীর ধারে। দিনে যতটা শান্ত, রাতে ততটাই অদ্ভুত নীরব। কেউ বলে—এই নীরবতার ভেতরেই লুকিয়ে আছে “চুলার আগুন”-এর আত্মা।

বছর পাঁচেক আগে গ্রামের এক গৃহবধূ, মনোরা, এক রাতে রান্না করছিল। ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল প্রবল, আর হঠাৎ চুলার আগুন নিভে যায়। সে আগুন জ্বালাতে গিয়ে কেরোসিনের বোতল উল্টে পড়ে যায়, আর মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে মারা যায় মনোরা।

তার চিৎকারে নাকি পুরো গ্রাম কেঁপে উঠেছিল। সেই রাতের পর থেকেই, প্রতি ঝড়-বৃষ্টির রাতে, গ্রামের কোনো না কোনো বাড়িতে নিজে থেকেই চুলায় আগুন জ্বলে ওঠে…


এক রাতে, রাশেদ নামে এক যুবক বন্ধুবান্ধবের চ্যালেঞ্জে পুরনো মনোরার বাড়িতে যায়।

“ভূত কিছু নাই রে, সব গুজব!” বলে হাসতে হাসতে ভিতরে ঢোকে। বাড়িটার দেয়াল ভেজা, ছাদে বাদুড় ঝুলছে। কোণের চুলাটা এখনো আছে, পুরনো মাটির তৈরি, কালচে হয়ে গেছে।

রাশেদ লাইট জ্বালাতে যায়—
কট করে নিভে গেল।

অন্ধকারে হঠাৎ ফসফস করে কিছু একটা জ্বলল। চুলার ভেতরটা থেকে আসছে হালকা আগুনের আলো!

আর তার ভেতর থেকে… যেন একটা নারী কণ্ঠস্বর—

“আগুনটা নিভে গেছিল রে… এখন আবার জ্বালিয়ে দিলি?”

রাশেদ পেছনে ফিরতে যায়—কিন্তু তার পায়ের কাছে তখন চুলার ছাই থেকে বেরিয়ে আসছে জ্বলন্ত হাত… 🔥
হাতটা তার পা চেপে ধরে, আর চোখের সামনে দেখা যায়—
পোড়া মুখ, ফাটা ঠোঁট, আর জ্বলন্ত চুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মনোরা!

“তুই আমার আগুন নিভাইতে এসছিস?”

রাশেদের চিৎকারে গোটা গ্রাম ছুটে আসে। কিন্তু বাড়ির ভেতর ঢুকতেই দেখা গেল—
চুলায় আগুন নেই, শুধু ছাইয়ের মধ্যে একটা আধপোড়া হাতের ছাপ…
আর রাশেদের শরীর—চুলার সামনে নিথর পড়ে আছে।


আজও ঝড়ের রাতে, গ্রামের লোকজন দূর থেকে দেখে—
মনোরার পুরনো চুলায় আগুন জ্বলে, আর কেউ যেন ফিসফিস করে বলে,

“আগুনটা নিভতে দিস না…” 🔥

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ