কালো দরজা — পর্ব ৭
শিরোনাম: "ছায়ার ফিসফিস" — আগের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই আরও ভয়ের গল্প।
পর্ব ৭ — ছায়ার ফিসফিস
রাতটা ছিল অদ্ভুত নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে হাওয়ার সঙ্গে ভেসে আসছিল পচা মাটির গন্ধ—যেন কেউ মাটির নিচে কবর খুঁড়ছে। গ্রামের আলো-দামামিতেও যেন আজ অচেনা কম আলো। সে রাতেই রহিম মিয়া সিদ্ধান্ত নিল, যে হারিয়ে যাওয়া মানুষের মধ্যে তার ভাইও আছে—তাই সে যাচ্ছি।
গ্রামের শেষ প্রান্তে পৌঁছে সে দেখল পুরনো স্কুলঘরটায় ক্ষীণ আলো জ্বলছে। যে স্কুলটি বহুদিন ধরে বন্ধ, প্রশাসন সিল করে রেখেছে—তবু একে অমন খুলে থাকার অবস্থা? রহিম কাঁপা কাঁপা পায়ে ভেতরে ঢুকতে লাগল।
ঘরের মাঝে একটি পুরোনো কাঠের চেয়ারে কেউ বসে আছে। প্রথম দেখায় মনে হলো তার ভাই—কিন্তু চোখ কালীাভ হয়ে গিয়েছে, মুখে অদ্ভুত এক বিনয়ী হাসি, কথা বেরোতে না জানালেও ঠোঁটের নিচে শব্দ ভেসে আসছে—ফিসফিস।
রহিমের পা পিছনে ঘোরাতে চাইলে দরজাটা ঠিকঠাক বন্ধ হয়ে গেল—বাইরে যেই বের হবার চেষ্টা করল, ততক্ষণে দেয়ালগুলো টুকটুক করে নড়তে লাগল। কোণাগুলো থেকে ছায়া বেরিয়ে আসছে; ছায়াগুলো বারবার একে পুনরাবৃত্তি করছে—এক শ্রোতশূন্য গায়ে লাগা কণ্ঠ যেন বলছে—"যে ঢোকে, সে আর ফেরে না।"
রহিম মাথা নিচু করে চেয়ারের দিকে তাকাল—চেয়ারে বসে থাকা মানুষটির হাওয়াটা করাতের মতো ঠান্ডা। তার ভাতে কী যেন নাড়াচাড়া নেই; অথচ তার শরীর থেকে মৃদু আলোর দোলা বের হচ্ছে, যেন ভিতর থেকেই আলো জ্বলে। সে বলল—কিছুই হয়নি, মাত্র ফিরে এসেছি—কিন্তু সেই কণ্ঠে মানবীয় কোনো গড়ন নেই।
হঠাৎ ঘরের অন্য প্রান্তে থেকে একটি হালকা হাসি ধ্বনি উঠল—এমননি এক ভীতিকর হাসি, যা শুনলেই রক্ত জমে। দেয়ালে আঁকা পুরনো ছবিগুলো অদ্ভুতভাবে ঝকঝকে হয়ে উঠল, আর ছবির ভেতরকার মুখগুলো ধীরে ধীরে পাতা খুলছে। রুমের এক কোণ থেকে আরেক কোণে ছায়া ছুটে বেড়াচ্ছে, যেন তারা একটি খেলায় লিপ্ত।
রহিম চিৎকার করে উঠতে চাইল, কিন্তু ধীরে ধীরে তার গলা কেঁপে ওঠে—আবছা স্মৃতি ভেসে আসে, সে দেখতে পেলো গ্রামের লোকজন একে একে অদ্ভুতভাবে বদলে যাচ্ছে; কেউ বাড়ি ফিরলেও আগের মতো নয়, তাদের চোখে অনাবিল শূন্যতা, হাসিতে নেই প্রাণ।
হঠাৎ চেয়ারের মানুষটি মুচকি হেসে বলল—"দরজাটা খুলেছে—এবার বড়রা আসছে।" তারপর তার হাতে ছায়ার ছোঁয়া, এবং রহিম মিয়ার শরীরের ভেতর ধীরে ধীরে ঠান্ডা ভরতে লাগল।
সেই রাত থেকে গ্রামে আর শান্তি হয়নি। প্রতিটা ঘর থেকে রাত হলে কেউ না কেউ খসে পড়ে—কেউ হঠাৎ অদৃশ্য, কেউ আবার ফিরে আসে, আগের মতন নয়। লোকেরা এখনো বলছে—যে দিনের রাতে কালো দরজা প্রথম খোলা হয়েছিল, তখন থেকেই ছায়ার ফিসফিস থামেনি।
শেষ কথা: রহিম মিয়ার ঘটনা শুধু একটি শুরু; এখন গ্রামটা প্রতিটি ডানার নিচে, প্রতিটি দরজার পেছনে আরেকটি ছায়া খুঁজছে। আর তুমি কি প্রস্তুত?


0 মন্তব্যসমূহ