শূন্য বাড়ির আলো

🕯️ শূন্য বাড়ির আলো

গ্রামের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে একটা পুরনো দোতলা ইটের বাড়ি। বছর ঘুরলেও কেউ সেখানে থাকেনি। তবু রাত হলে অনেকেই বলে—বাড়ির জানালায় হলুদ আলো ঝলমল করে এবং ফিসফিসানি শোনা যায়।

রিফাত আর সোহেল, গ্রামে সাহসিকতার জন্য পরিচিত দুই বন্ধু, ঠিক করল—যদি কেউ সত্যিই ভুত থাকে, তা হলে তা খুঁজে বের করবে। রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। বাতাসে কুয়াশা, কুকুরের হাউমাউ, আর ঝরনাধ্বনির মতো শব্দ। তারা দু’জনে বাড়ির দিকে এগোতে লাগল।

দরজা অদ্ভুতভাবে খোলা ছিল। ভেতরে ঢুকতেই শিউরে উঠল দু’জনের গা। মেঝেতে ধুলো, পুরনো আসবাব উল্টে পড়ে, দেয়ালে ছাপিয়ে আছে বাদুড়ের জাল। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়েই তারা শুনল ফিসফিসানি“কেন এসেছো… এখানে আসার অধিকার কার আছে?”

সোহেল কণ্ঠ কাঁপিয়ে বলল, “কে আছেন এখানে?”

কোনো উত্তর এলো না, শুধু হঠাৎ ভেসে এল এক ভেজা গলার হাসি—কর্কশ আর ভীতিকর।

তারা দু’জনে দৌড়ে সিঁড়ি নামতে চাইলে, সিঁড়ির নিচে তিনটি সাদা পোশাকের নারী দাঁড়িয়ে আছে। মুখ দেখা যায় না, লম্বা চুল তাদের মুখ ঢেকে দিয়েছে। তারা একসাথে হাসল—“এবার কেউ আর ফিরবে না।”

রিফাতের হাত কাঁপতে লাগল, সোহেলের মুখ ফ্যাকাশে। হঠাৎ দরজা জোরে বন্ধ হয়ে গেল। ভেতরটা অন্ধকার, গন্ধে যেন কবরের ভেতরের বাতাস। তাদের চোখের সামনে ছায়া নড়ল, মনে হলো কেউ ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।

রিফাত চিৎকার করার চেষ্টা করল, কিন্তু সোনার মতো ঠাণ্ডা কিছু এসে তার গলার কাছে হাত রাখল। সোহেল কিছুই করতে পারল না, শুধু কাঁপতে লাগল। তারপর হঠাৎ এক ঝলক আলো, আর সব নিস্তব্ধ।

পরের দিন গ্রামে লোকেরা দেখল—বাড়ির দরজা বন্ধ, অদ্ভুতভাবে সব স্থির। কিন্তু মেঝেতে দেখা গেল তিন জোড়া ভেজা পায়ের দাগ, যা সিঁড়ি থেকে সরাসরি অদৃশ্য হয়ে গেছে। সেই রাতের পর থেকে কেউ আর ওই বাড়ির দিকে পা বাড়াতে সাহস পায়নি।

আরও ভয়ের বিষয় হলো—রাত হলেই দেখা যায়, জানালায় আবারও হলুদ আলো ঝলমল করছে, আর ফিসফিসানি শুনা যায়। কেউ না কেউ বলছে, “ওরা এখনো সেখানে আছে, নতুন ভুক্তভোগীর অপেক্ষায়…”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ